অপারেশনের নাম সিঁদুর। যা হিন্দু নারীদের বিবাহের চিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছ পেহেলগামে যেহেতু হিন্দু পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে এবং সিঁথির সিদুর হারিয়েছন ২৬ জন হিন্দু নারী তাই তাদের সম্মান জানাতেই ভারত তাদের এই সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে অপারেশন সিঁদুর। ইন্টারেস্টিংলি এই ঘটনায় ৭মে সামরিক যে বৈঠক হয়েছে তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুজন নারী সামরিক কর্মকর্তা।

এই সিন্দুর বা সিঁদুর অভিযানে এখন পর্যন্ত দুই অংশে প্রায় ৮০ জনের প্রাণনাশের খবর পাওয়া গেছে। দুই পক্ষর নানা ক্ষয় ক্ষতির খবরও আসছে গণমাধ্যমে।

প্রশ্ন হচ্ছে এই হামলা, প্রতি হামলা কতদূর যাবে। এটা কি দুই দেশকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে?

৬ মে’র মধ্যরাতে দুই দেশ একে অপরকে যে আক্রমণের পর থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ। এখন এই আক্রমন । কোথায় দাঁড়াবে এই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ

আলাপটা যদি একটু পেছন থেকে শুরু করি, পেহেলগামের ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষেদগার করে যাচ্ছিলো ভারত। এবং ভারতের পক্ষ থেকে এ ধরণের যেকোনো একটি জবাব ছিলো সময়ের অপেক্ষা মাত্র। পাকিস্তানকে ঘিরে ভারতের পদক্ষেপগুলো সাধারণত ঘটে থাকে পরিচিত একটি ছকে। পরিচিত ছকটি কি?

প্রথমে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে হামলা হয়। পাকিস্তানের ওপর এর দায় চাপিয়ে দেয় নয়াদিল্লি।

এরপর ভারতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যুদ্ধের দামামা বাজানো হয়। গণমাধ্যমগুলোতে দেশটির অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। জয় ছিনিয়ে আনার মত বক্তব্য আসতে থাকে। যা এবারো দেখা গেছে।

পাকিস্তান কে জবাব দেয়ার নানা পথ বাতলেছেন অনেকে।
কেউ আগ্রাসী, কেউ সাবধানী ছিলেন।
বলেছেন- সীমিত আকারের জবাব দেয়ার কথা বলেছেন তারা।

এখন একটি বিষয় খোলাসা করা যাক। ভারত-পাকিস্তানের ওপর যে হামলা চালালো তা কি সীমিত?
পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় এই যুক্তি দেখানো যেতে পারে যে ওই শাস্তি সীমিত হবে।

কিন্তু মোদী সরকারের ওপর রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের চাপ- তাতে যে বার্তা পাওয়া যায় তা থেকে বোঝা যায় এই আক্রমন সীমিত হওয়ার সুযোগ কম।

তবে সীমিত আকারে পারমাণবিক হামলার পরিকল্পনা যে ভারত করছে না- এটা ধারণা করা যায় ।

তারা সীমিত আকারে গতানুগতিক হামলা চালাতে চায়। একই সঙ্গে হয়তো তারা এমনভাবে এই সংঘাতকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে চায় যেন পাকিস্তান পারমাণবিক হামলা করার পর্যায়ে না পৌঁছায়। তাদের আক্রমনের ধরন তাই বলছে।

যেমন প্রথম আক্রমণ ভারতেরই। আর ভারত যেটা করেছে তা হচ্ছে শুরুতেই ভুল বা গোড়ায় গলদ। তা না হলে ভারত পাকিস্তানের কোন এয়ার বেজ ক্যাম্প বা ব্রিগেড ইউনিট হেড কোয়ার্টারের আক্রমণ বাধাতে পারতো।

ভারত শুরুতেই আক্রমণ করে বসলেও তাদের লক্ষ্য বস্তু ছিলো সাধারণ মানুষের স্থাপনা এবং মসজিদ।

পক্ষান্তরে পাকিস্তান ৬টা ভারতীয় জেট এয়ার ভূপতিত করেছে এবং ভারতের শ্রীনগরের বিগ্রেড সদরদপ্তরে আক্রমণ করেছে।

পাকিস্তান সমর নীতির বেসিক ফলো করেই আক্রমণ করেছে। পক্ষান্তরে ভারত পাকিস্তানের ২৬ জন মানুষ হত্যা করেছে।

তাছাড়া পাকিস্তানের সীমানায় কোন এয়ারক্রাফট চালাতে ভারত পারেনি বা পাকিস্তান ব্যর্থ করে দিয়েছে।

আমেরিকার আগে চীনই পাকিস্তানের পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তারও আগে তুরস্ক সহ পাকিস্তানের মিত্র দেশ স্টেটমেন্ট দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের এই সুযোগ রয়েছে যে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমিত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে। কারণ, প্রচলিত যুদ্ধ সক্ষমতার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারত এমন হামলা চালানোর পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য যথেষ্ট কূটনৈতিক সক্ষমতা দেশটির রয়েছে।

আর এই হামলায় পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিশোধ নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ, এ জন্য দেশটিকে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামরিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ফলে সংঘাত বৃদ্ধি পাক, তা চাইবে না তারা। আর পাকিস্তান সংঘাত বৃদ্ধির পথে না এগোলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের আধিপত্য থাকবে।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে সীমিত যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিসরে না–ও থাকতে পারে। দুই পক্ষই রক্ত ঝরাতে ঝরাতে আরও সংঘাতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শুধু আত্মসম্মান নয়, বরং প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধের জন্য তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া সংঘাত থামানোর জন্য প্রস্তুত না–ও থাকতে পারে তারা।

যদি এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সীমিত যুদ্ধ বড় আকারের আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মহলকে আরো তৎপর হতে হবে। কারণ, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ বিশ্ব শান্তির জন্য এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই, এখন সময় এসেছে দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর। কষ্টকর হলেও শান্তির সংলাপই পারে এই সংকটের সমাধান দিতে।