ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। বন্ধুরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাম্য ছিলেন এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র।
রাত ১১টার দিকে মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সাথে তার ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাম্যের ডান পায়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ শুরু করেন। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্রদল কর্মীরা রাত ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, “তোমরা যদি মনে করো, তুমি আর আমি আলাদা পক্ষ, আমি এখানে দাঁড়ায়ে আছি; আমাকে মার বেটা, মার।”
এই বক্তব্য আরও উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এক শিক্ষার্থী তখন বলেন, “সিনেমা কইরেন না, স্যার, সিনেমা কইরেন না।” এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা একাডেমির সামনে সাম্যকে হত্যার পর খুনিরা কীভাবে পালিয়ে গেল? প্রক্টরিয়াল টিম কেন তাদের ধরতে ব্যর্থ হলো?”
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক বিবৃতিতে বলেন, “সাম্য হত্যার পর ভিসি ও প্রক্টরের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চলছে, যা সত্যকে আড়াল করার প্রয়াস।” অন্যদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি অভিযোগ করেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগ থানার অধীনে, যা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।”
এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন লেখক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “ঢাবির ঐতিহাসিক লিবারেল-সেকুলার পরিসরকে ডান-রক্ষণশীল স্পেসে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পাসে শিবিরের শিক্ষার্থীদের পাহারাদারি শুরু হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ঢাবি একটি জনপরিসর, যা সকল মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত।”
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শাহবাগ থানার ব্যর্থতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের বিশ্বাস, সাম্যের মতো আর কোনো শিক্ষার্থী যেন নিরাপত্তাহীনতার শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।


