Homeজলবায়ু-পরিবেশভূমিকম্পে বিপর্যয় ঠেকানোর প্রস্তুতি নেবেন?

ভূমিকম্পে বিপর্যয় ঠেকানোর প্রস্তুতি নেবেন?

Date:

এ বছরের মার্চ এপ্রিল মাসে যখন ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে বলছির দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করছিলাম, তখন দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি যে তার ঠিক সাত আট মাস পর, ২১ নভেম্বর সকালে জীবনে প্রথম এরকম মৃত্যুভয়ের মুখোমুখি হব।

শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় আমি ও আমার ছেলে লিফটের ভেতর ছিলাম। নিচতলা থেকে পাঁচ তলায় যাওয়ার পথে লিফট থেমে যায় এবং শুরু হয় প্রচন্ড ঝাকুনি। ওই পুরো ২৬ সেকেন্ড আমরা লিফটের ভেতর মৃত্যুভয়ে কাঁপছিলাম, আর নিজের বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছিল- পায়ের তলার মাটি তো কেঁপেই যাচ্ছে। তবুও আমাদের চিন্তার জগতকে কাঁপাতে পারছে না। আমরা বোধহয় শেষ মরন ঝাঁকুনিটার জন্য অপেক্ষা করছি। সেই মরন কাঁপুনি চলেই এলো!!!
তাই আবারো এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় ফিরতে হলো ঢাকা থেকে বলছির আজকের পর্বে। সাথে আছি আমি নবনীতা ইসলাম।

প্রায় ৪৮ ঘন্টা হয়ে গেল। কোথাও কোন পদক্ষেপের আওয়াজ পাচ্ছেন?? আমি বা আপনি কি কোন উদ্যোগ নিয়েছি দূর্যোগকালীন বিপদ মোকাবেলার?

কবি কফিল আহমেদের মতে ভুমি নির্যাতন এখানে এমন পর্যায়ে গেছে যে ভূমি আর নিতে পারছে না।
ঢাকা শহর ক্রমান্বয়ে কিভাবে, কার কারণে, কতদিন ধরে এই অসম্ভব দুর্দশাময় অবস্থায় পৌছাল, যার দুর্যোগ মোকাবেলার ন্যূনতম ক্ষমতা নেই, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সনাক্ত করার প্রকল্পটি কেন আলোর মুখ দেখল না, সেইসব বিশ্লেষণে যাওয়ার মত সময় এখন আর আমাদের হাতে নেই।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান আনসারী বলেছেন, বড় ভূমিকম্প আমাদের দোরগোড়ায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার ভূমিকম্পের বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। সাতমাত্রার ভূমিকম্প হলে ফায়ার সার্ভিসও খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাস্তায় এক্সপ্রেসওয়ে,মেট্রো রেল পড়ে থাকবে। গাড়ি

চলার সুযোগও থাকবে না।”
ভূমিকম্প প্রতিরোধী করার জন্য দালানকোঠা renovate/retrofit করবেন?? এত সময় বা সামর্থ্য ও আমাদের নাই।

এখন জান বাঁচান ফরয। তা কি করবেন???
পালাবেন, বা, আপনাকে উদ্ধার কর্মীরা এসে উদ্ধার করবে, তাই তো? মরন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভাবছিলাম, লিফট ছিঁড়ে বিল্ডিং এর নিচে যদি চাপা পরি, কোন উদ্ধারকারী দল কি পৌঁছাতে পারবে আমাদের উদ্ধার করার জন্য??
এন এফ পি এ ইউ এস এ, ইউ কে বিল্ডিং রেগুলেশন্স, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী উদ্ধারকারী যানবাহনের জন্য ন্যূনতম ৪.৫ মিটার প্রস্থের রাস্তা লাগে। ড্যাপ 2015-2022 ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এর পরিবেশ উপকমিটির সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে ঢাকার আনুমানিক ৭২% রাস্তা ৪.৫ মি র কম প্রস্থের। তাই উদ্ধার হওয়ার আশা আপাতত অলীক কল্পনা।

যেটুকু করা যায় তা হলো,

নিজ বিল্ডিং এর structurally মজবুত অংশ যেমন- কলাম/ লিফট কোরের দেয়াল, যেটা ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে, সেখানে বড় করে লিখে রাখুন
‘ভূমিকম্পের সময় এখানে দাঁড়ান’। প্রতি ফ্লোরে লাগান এই সাইন যেন ঐ ফ্লোরের সবাই ঐ স্পটে আশ্রয় নেয়।
নমুনা হিসাবে BRAC university campus এর কিছু সাইনেজের ছবি দেখতে পারেন। বাসা, প্রতিষ্ঠান,অফিস সর্বত্র এই সাইনেজগুলো ইমার্জেন্সি প্রায়োরিটি হিসাবে লাগানো উচিত।

ঐ নিরাপদ স্পট পর্যন্ত পৌঁছানর পথে কোন ভারী সুভেনির , কাঠের ভারি বা কাঁচের আলমারি কিছু থাকলে সরিয়ে ফেলুন।

দুর্যোগ কালীন যানবাহন ঢুকতে না পারলেও, নিজের উদ্যোগে এলাকাভিত্তিক কিছু

evacuation route (দুর্যোগ কালীন নির্গমন পথ) এবং সংলগ্ন কিছু খালি জমি খুঁজে বের করুন। যেখানে খোলা আকাশের নিচে একত্র হতে পারবেন।

পারলে সেই রুটগুলো নিয়ন সাইন দিয়ে রং করে দিন এলাকার মানুষ নিয়ে।

আর সেই জরুরী নির্গমন পথ/রাস্তা unobstructed রাখুন। পারলে দ্রুত ছাউনি তৈরী করুন রাস্তার কিনারা ধরে যেন বিল্ডিং থেকে ভাঙা কাঁচ, রেইলিং মাথার উপর না পরে।

আর, দয়া করে……….রাত ১১ টার পর গেট তালা/ ডাবল তালা বন্ধ করবেন না। অন্তত এই কয়দিন, নিজের স্থাবর সম্পত্তি থেকে নিজের ও অন্যের জীবনকে একটু বেশী গুরুত্ব দিন। সবাই যেন বের হতে পারে দুর্যোগ মুহূর্তে, নিশ্চিত করুন।

এটুকুই করার আছে এই মুহূর্তে। আর যদি এ যাত্রা বেঁচে যাই, বেঁচে যান, তাহলে ভবিষ্যতের নগর

পরিকল্পক , নগর প্রশাষক, মন্ত্রনালয়, সরকার সবাইকে প্রশ্ন করি কেন ২০১৪ সালে রংপুর সিটি কর্পোরেশন বা অন্যান্য জেলার জন্য earthquake contingency plan র যে পরিকল্পনা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হয় না কেন। ঢাকার মতো সবচেয়ে বেশী জনঘনত্বের শহরকে ভূমিকম্পরোধী করার কোন উদ্যোগ নেই কেন।
মনে রাখবেন, ন্যায্য রাজনীতি, বৈষম্যহীনতার তখনই অর্থপূর্ণ যখন তা আপনাকে নিরাপদ, সুস্থ জনজীবনের নিশ্চয়তা দেয়।
নিরাপদ থাকার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন

সাম্প্রতিক